বিবর্তনবাদ সারসংক্ষেপ

345
0
2022-06-07に共有
আমাদের দেশে বিবর্তন একটি তীব্র বিতর্কিত বিষয়। বিবর্তনের সঠিক ব্যাখ্যা হর হামেশাই ধর্মের বিপক্ষে চলে যায় তাই ধার্মিক ব্যক্তিরা বিবর্তনকে সচরাচর স্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন না। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বিজ্ঞানী ডারউইন তার নিজের লিখিত বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ "অরিজিন অফ স্পিশিজ" বইটিতে, বিবর্তনের একটি প্রাথমিক ধারণা দেন যা তখনকার সময় বৈজ্ঞানিক এবং ধর্মিয় মহল উভয় ক্ষেত্রেই সাড়া ফেলে দেয়। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় দেড়শ বছরেরও অধিক সময় পেরিয়ে গেছে। এই দেড়শ বছর যাবৎ এই বিষয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। সেই গবেষণালব্ধ ফলাফলগুলো বিবর্তনবাদের সপক্ষেই যায়। তাই বিবর্তনকে এখন আর কোন ধারণা নয় বরং একটি স্বচ্ছ ও সু-পরিক্ষিত আবিষ্কার বলা চলে।

ডারউইন তার বইটি প্রকাশ করা মাত্র সমসাময়িক গির্জাগুলো একজোটে তার বিপক্ষে চলে যায়। কারণ, ডারউইনের গবেষণা ধর্মীয় সৃষ্টিতত্ত্বকে একটি ভ্রান্ত ধারনায় রূপান্তরিত করে। মূলত সেকারণে ডারউইন ধর্ম যাজকদের চক্ষুশূল হয়ে যান। এই ভিডিও তৈরির মূল উদ্দেশ্য হলো বিবর্তনবাদকে সহজভাবে তুলে ধরা। তারপর আপনি সেটিকে কি রূপে বিচার করবেন তা নিতান্তই আপনার ব্যাপার। বিজ্ঞানের একটি বিশেষ দিক হলো এর পরিবর্তনশীলতা। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, নিউটন আমাদেরকে মাধ্যাকর্ষণ সম্পর্কে যে ধারণা দিয়েছিলেন সেটি পুরোপুরি সঠিক ছিলোনা। নিউটন মাধ্যাকর্ষণকে ব্যাখ্যা করেছিলেন একটি বল হিসাবে। কিন্তু পরবর্তীকালে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কল্যাণে আমরা জেনেছি, মাধ্যাকর্ষণ আসলে কোন বল নয়, বরং স্থান কালের সংকোচন মাত্র। এ থেকে দেখা যাচ্ছে যে বৈজ্ঞানিক থিউরিগুলো পরিবর্তনশীল। তাই বিবর্তনবাদও ভবিষ্যতে বদলাতে পারে সেটি বিচিত্র কিছু নয়।

এবার আসা যাক সেই চিরাচরিত তর্কের ব্যাপারে। মানুষ কি বানর থেকে এসেছে নাকি আদম হাওয়া থেকে এসেছে? মানুষ যেখান থেকেই আসুক না কেন, ডারউইন কিন্তু সরাসরি কোথাও এমনটি বলেননি যে, একটি বানর হঠাৎ করে মানুষে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিলো আর সে থেকেই মানুষের উদ্ভব। তবে মানুষের ডিএনএ’র সাথে বানরের ডিএনএ’র ক্ষেত্র বিশেষে ৯৬ থেকে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত মিল পাওয়া গিয়েছে। ব্যাপারটা মেনে নেয়া একটু কষ্টকর হলেও পরীক্ষিত সত্য ঘটনা। আজ যদি বানরের জায়গায় সিংহ হতো তাহলে হয়তো আমাদের জন্য সেটি মেনে নেয়া অনেকটা সহজ হতো। আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিষ্ট্রি তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে,
“Human DNA is, on average, 96% identical to the DNA of our most distant primate relatives, and nearly 99% identical to our closest relatives, chimpanzees and bonobos.”
ঠিক যা বলছিলাম। এই জটিল ব্যাপারটা বুঝার জন্যে বিবর্তনের আরেকটি বিশেষ অধ্যায় সম্পর্কে আপনার বিস্তারিত জ্ঞান থাকাটা প্রয়োজন। সেটি হলো জিন মিউটেশন। সহজ বাংলায় জিন মিউটেশনকে জিনের পরিবর্তন বলা যেতে পারে। পরিবেশগত নানা কারণে জীবদেহে মিউটেশন হয়ে থাকে। এতে ঐ জীবের শরীরে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব হয়। মানুষের চামড়ার ক্যানসার একটা মিউটেশনের উদাহরণ। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি যখন চামড়ায় পতিত হয় তখন চামড়ার কোষের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে তার জিনগুলো বদলে যায়। আর সেখান থেকে জন্ম নেয় ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা নামক ভয়াবহ এক চামড়ার ক্যানসার। এটি একটি প্রাণঘাতী রোগ। যদিওবা এই মিউটেশনটি আমাদের কাম্য নয় তদুপরি এটা প্রমাণিত হয় যে, পারিপার্শ্বিক অবস্থা জীবদেহে মিউটেশন ঘটাতে সক্ষম।

এর বিপরীতে অন্য একটি ভালো মিউটেশনের উদাহরণ দেয়া যাক। আফ্রিকায় সুর্যের অতি বেগুনী রশ্মির তীব্রতা পৃথিবীর অন্য যেকোন অঞ্চলের চেয়ে বেশী হয়। কিন্তু আফ্রিকানদের মধ্যে চামড়ার ক্যানসারের হার তুলনামুলকভাবে যথেষ্ট কম। আপনারা নিশ্চয় দেখেছেন আফ্রিকা মহাদেশের মানুষ কালো বর্ণের হয়ে থাকেন। চামড়ার কোষে মেলানিন নামক একটি রঞ্জক কণিকার উপস্থিতির জন্যে চামড়ার রঙ কালো হয়। এই কণিকাটি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিরোধে সক্ষম। এতে চামড়ার ভয়াবহ ক্যানসার প্রতিহত হয়। মজার ব্যাপার হলো কোন সাদা চামড়ার মানুষ আফ্রিকায় গেলে তাকে সান্সক্রিম মাখতে হয় কিন্তু আফ্রিকান মানুষদের কোন সান্সক্রিমের প্রয়োজন হয়না। এই জিনগত বৈশিষ্ট্যটি আফ্রিকান মানুষদের জিনে আজো রয়ে গেছে। তাই আফ্রিকান বংশোদ্ভূত যেকোনো ব্যক্তি পৃথিবীর যে প্রান্তেই জন্ম নিক না কেনো তার গায়ের রং কালো হবে। এটি তাদের দেহের একটি জিনগত বৈশিষ্ট্য।

আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে চামড়ার কোষগুলো বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করছে। তা না হলে মেলানিন তৈরি করলো কিভাবে? কিভাবে তারা বুঝতে পারলো যে একমাত্র মেলানিন তৈরি করলেই সূর্যের অতি বেগুনী আলো থেকে আমরা বাঁচতে পারবো? এখানেই ন্যাচারাল সিলেকশনের একটা ব্যাপার রয়ে গেছে। অন্যভাবে বলা যায় কালের বিবর্তনে একমাত্র মেলানিন তৈরি করতে পারা মানুষগুলোই এখন পর্যন্ত টিকে আছে আর ভয়াবহ হলেও সত্যি যাদের চামড়া একেবারেই কোন মেলানিন তৈরি করতে পারেনি তারা সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছে।

বিবর্তন একটি অতিমাত্রায় ধীরগতিসম্পন্ন প্রক্রিয়া। আজকে মানবদেহের যে বিবর্তিতরূপ সেটি প্রায় পঞ্ছান্ন লক্ষ বা অর্ধকোটির অধিক বছরের ক্রমাগত বিবর্তনের ফসল। আজো আমরা বিবর্তনের মধ্য দিয়েই যাচ্ছি। আরো অর্ধকোটি বছর পরে যদি মানব সভ্যতা টিকে থাকে তবে সেটি দেখতে কেমন হবে তা চিন্তা করতেই অবাক লাগে।

Footage
www.videvo.net
Videezy.com
pexels.com

コメント (4)